শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪, ০৬:৪৭ অপরাহ্ন

নবীজির যুগে সমাজসেবা কর্মসূচি

নবীজির যুগে সমাজসেবা কর্মসূচি

স্বদেশ ডেস্ক:

দরিদ্র ও নিরীহ মানুষকে সাহায্য করা, ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত লোকদের খাদ্য দান, বিধবার সাহায্যে এগিয়ে আসা এবং শারীরিকভাবে অসমর্থ মানুষের সেবা করা অতি মূল্যবান ও মহান কাজ। ইসলাম মানুষকে আল্লাহর ওপর ঈমান আনা এবং তাঁর ইবাদতের ওপর যেমন জোর দেয়, তেমনি মানবগোষ্ঠীর সেবার ওপরও জোর তাগিদ দান করে। আল্লাহর নবী (সা.) বলেন, ‘মানবজাতি হচ্ছে আল্লাহ তাআলার পরিবার আর তোমাদের মধ্যে তারাই আল্লাহর পছন্দনীয়, যারা তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করে।’ (তাবরানি আওসাত, হাদিস : ৫৫৪১)

ইসলাম আল্লাহকে বিশ্বাস এবং তাঁর সৃষ্টির সেবার কথা বলে। এই বিশ্বাস ও মানবসেবায় যেসব মানব-মানবী তৎপর তারা আল্লাহর রহমত ও কল্যাণ লাভ করতে পারে। এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন সুষ্পষ্ট বক্তব্য পেশ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘কোনো পুণ্য নেই পূর্ব এবং পশ্চিম দিকে তোমাদের মুখ ফেরানোতে, কিন্তু পুণ্য আছে কেউ ঈমান আনলে আল্লাহর ওপর, আখিরাতের ওপর, ফেরেশতাদের ওপর, সব কিতাবের ওপর আর সব নবী-রাসুলের ওপর এবং অর্থ দান করলে আল্লাহর প্রেমে আত্মীয়-স্বজন, এতিম, মিসকিন, মুসাফির, সাহায্যপ্রার্থী এবং দাস-দাসীর মুক্তির জন্য, সালাত কায়েম করলে, জাকাত দিলে, কৃত প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করলে আর অভাবে রোগে-শোকে ও যুদ্ধবিভ্রাটে ধৈর্য ধারণ করলে। এরাই হলো প্রকৃত সত্যপরায়ণ, আর এরাই মুত্তাকি।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭৭)

ইসলামের এ শিক্ষা অতীতে প্রতিটি মুসলমানের বিশ্বাসে ও কর্মে প্রতিফলিত ছিল। একদিন এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর কাছে এলো এবং তাঁকে তার ক্ষুধার কথা জানাল। তখন খাবারের মতো কোনো কিছু নবীজির কাছে ছিল না। তিনি তার সাহাবিদের কাছে বিষয়টি জানালেন। তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, ‘তোমাদের কেউ কি আমার পক্ষ থেকে অভাবী লোকটিকে আজ রাতে খাওয়াবে?’

‘আমি খাওয়াব, হে নবী (সা.)’, বললেন একজন সাহাবি। ওই সাহাবি লোকটিকে তাঁর বাসায় নিয়ে গেলেন এবং তাঁর স্ত্রীকে সব কথা খুলে বললেন। তিনি স্ত্রীকে বললেন, ‘এ লোকটি হচ্ছে মহানবী (সা.)-এর মেহমান। আমরা আমাদের সাধ্যমতো লোকটিকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’ সাহাবির স্ত্রী জবাবে জানালেন, ‘ঘরে যে সামান্য খাবার আছে তা মোটেই পরিমাণমতো নয়। তা দিয়ে বাচ্চাদের কোনো রকমে খাওয়ানো যেতে পারে।’ স্ত্রীর কথা শুনে সাহাবি আনসারি বলেন, ছেলে-মেয়েদের না খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দাও। আমি মেহমানকে নিয়ে খেতে বসলে তুমি ঘরের বাতিটা নিভিয়ে দেবে। এতে মেহমান আমি খাবার খেলাম কি না তা দেখতে পারবে না। আর এই সুযোগে মেহমান তার প্রয়োজনমতো পেট পুরে খেয়ে নিতে পারবে।

এভাবে সাহাবি ও তাঁর স্ত্রী মেহমানকে খাইয়ে তাঁর মহান দায়িত্ব পালন করলেন। অথচ সাহাবি ও গোটা পরিবার সারা রাত না খেয়ে উপোসে কাটিয়ে দিলেন।

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) সব সময় একজন না একজন ক্ষুধার্ত মানুষকে সঙ্গে নিয়ে খাবার খেতেন। কিছু গরিব ও ক্ষুধার্ত লোক তাঁর ঘর থেকে মসজিদ পর্যন্ত এলাকায় রাস্তার পাশে লাইন ধরে বসে থাকত। নামাজ শেষ করে ওমর (রা.) তাদের  যেকোনো একজনকে সঙ্গে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন এবং তাকে নিয়ে আহার করতেন। সাহাবিদের অনেকেই আর্থিকভাবে দুর্বল ছিলেন। অথচ গরিব ও অসহায় মানুষের জন্য তাঁদের মন ছিল উদার এবং তাঁদের দরজা ছিল সব সময় উন্মুক্ত। ক্ষুধার্ত ও গরিব লোকদের খাওয়াতে পেরে তাঁরা যারপরনাই খুশি হতেন। তাঁদের সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘আর তারা আল্লাহ মহব্বতে খাদ্য দান করে মিসকিন, এতিম ও বন্দিকে। তারা বলে, শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই তোমাদের আমরা খাদ্য দান করেছি, আমরা তোমাদের কাছে কোনো বিনিময় চাই না এবং কোনো কৃতজ্ঞতাও না।’ (সুরা : দাহর, আয়াত : ৮-৯)

মহানবী (সা.) সামাজিক সেবাকে জিহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি একদা বলেন, ‘যারা বিধবা ও গরিবের উন্নতির জন্য কাজ করে তারা যেন আল্লাহর পথে জিহাদের মতো কাজ করল।’ (বুখারি ও মুসলিম)

মহানবী (সা.) আরো বলেন, ‘তোমরা দান করো, সাহায্য করো এবং নিজেদের আগুন থেকে রক্ষা করো সেদিন পর্যন্ত, যখন তোমরা সামান্যতম সময়ও পাও।’

আল্লাহর নবীর এসব উদ্দীপনামূলক ও গঠনমূলক বক্তব্য শুনে সাহাবিরা অভাবী ও অসহায় লোকদের সাহায্য-সহযোগিতার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকতেন।

অভাবী, গরিব, দুঃখী, দাস, এতিম ও নিরুপায় বিধবাদের সেবার জন্য সাহাবিরা প্রায়ই প্রতিযোগিতা করতেন। মদিনার উপকণ্ঠে ছিল এক অন্ধ নারীর বাস। তাকে দেখার মতো কেউ ছিল না। এ কথা উমর (রা.)-এর কানে এলো। তিনি ওই নারীর সেবা করতে লেগে গেলেন। প্রতিদিন খুব ভোরে তিনি ওই নারীর ঘরে আসতেন এবং তার আরামের জন্য যাবতীয় কাজ সেরে তবে তিনি যেতেন। এটা তাঁর নিত্যদিনের রুটিনে পরিণত হয়ে গেল। এভাবে যখন চলছে, তখন একদিন তিনি দেখলেন, অন্য কে যেন তার আগে এসেই বৃদ্ধ নারীর সেবাযত্ন সেরে চলে গেছে। এতে তিনি খানিকটা বিস্মিত হলেন। তাই বিষয়টি জানার জন্য তিনি পরের দিন বুড়ির ঘরের বাইরে ওত পেতে বসে রইলেন। তিনি দেখতে পেলেন নবীজির ঘনিষ্ঠ সহচর আবু বকর (রা.) বুড়ির ঘরে ঢুকছেন এবং বৃদ্ধ ও অন্ধ নারীর যাবতীয় ব্যক্তিগত কাজকর্ম সেরে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছেন।

ইসলামের এই শিক্ষা ও ঐতিহ্য ব্যক্তিগতভাবে সব মুসলমান এবং সমষ্টিগতভাবে মুসলিম সমাজের পালন করা উচিত। এটাই হচ্ছে এ দুনিয়ার জীবনে শান্তি এবং আখিরাতে মুক্তির অন্যতম উপায়। মানুষে মানুষে চরম বৈষম্যের কারণে দুনিয়ার সর্বত্র জ্বলছে অশান্তির দাবানল। এই অসহনীয় ও বিপর্যয়কর অবস্থা থেকে মানবতাকে বাঁচাতে হলে ইসলামের শিক্ষাকে বাস্তবায়ন করতে হবে। গরিব, অভাবী ও অসহায় মানুষকে ভালোবাসতে হবে এবং তাদের সাহায্যে উদারভাবে এগিয়ে আসতে হবে। যেমনি এসেছেন আমাদের প্রিয়নবী (সা.) এবং তাঁর সাহাবিরা। আর এ কাজ মুসলমানদের অন্যতম প্রধান কাজ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877